Blog

অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুদের কিভাবে লেখা শেখাবেন?

dishadigitalschool

বেশীরভাগ অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুদের ভাষাগত সমস্যা দেখা যায়। লেখা ও পড়া এই দুটোই তাদের কাছে এক বড় সমস্যা। এই সমস্যা গুলো কাটিয়ে ওঠার জন্য তাদের সাহায্যের প্রয়োজন হয়। হাতের সঞ্চালনগত ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ও নিয়মিত লেখার অভ্যাস করে এই সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে।

নিম্নলিখিত পদ্ধতির দ্বারা অটিজম শিশুর লিখন পদ্ধতি উন্নত করা যেতে পারে।

১) শিশুকে শেখাতে হবে কিভাবে সে পেনসিল বা পেন সঠিক পদ্ধতিতে ধরবে- শিশুকে লেখা ও পড়ার কাজে যুক্ত করার আগে এই কাজটি অভিভাকদের করতে হবে। প্রথমে আপনি নিজে একটি পেনসিল ধরুন ও আপনার শিশুর সামনে কোনো খাতায় পেনসিল দিয়ে লিখে দেখান। এবার আপনি পেনসিল টি আপনার শিশুর হাতে সঠিক ভাবে ধরিয়ে দিন ও তার হাত ধরে আপনার লেখাটির ওপর হাত ঘুরিয়ে দিন। এটা যত দ্রুত সম্ভব শেখান। বেশীরভাগ চাইল্ড ৪ বছর বয়সের মধ্যেই সঠিক ভাবে পেনসিল ধরতে শিখে যায়।

২) আঙ্গুল ও হাতের পেশির শক্তি বৃদ্ধির জন্য Squeeze এক্সারসাইজ করান- এক্ষেত্রে স্ট্রেস বল ও প্লে-ডো এর কাজের মাধ্যমে আঙুলের শক্তি বাড়ানো যেতে পারে। খুবই হালকা বস্তু দিয়ে কাজ শুরু করুন ধীরে ধীরে কঠিন বস্তু ব্যবহার করে আঙুলের এক্সারসাইজ করান। কাদা মাটি দিয়ে বিভিন্ন বস্তু বানানো আটা মাখা, ছোট বোতলে চাল ঢালা, পুঁথি গাঁথা, গাছের পাতা ছেঁড়া এসব কাজ করান।

৩) আঁকার কাজের বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহারের মধ্য দিয়ে শিশুর হাতের সঞ্চালন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। চক, পেইন্টস, মার্কার, ক্রায়নস, কালারিং বুক, ষ্ট্যাম্প এসবের দ্বারা শিশুকে স্বাধীনমতো কোন কিছু আঁকতে দিন যা হবে খুবই সহজ।

 

৪) উল্লম্ব পৃষ্ঠতলের উপর পেইন্ট করতে বা আঁকতে দিন। উল্লম্ব সারফেসে কাজ করলে পেশি ও কব্জির সঞ্চালন ক্ষমতার বিকাশ ঘটে যা অটিজম শিশুর লিখন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

৫) হাতের সঠিক অবস্থানের জন্য পেনসিল গ্রিপ ব্যবহার করুন- যদি শিশুর পেনসিল ধরতে সমস্যা হয় সেক্ষেত্রে পেনসিল গ্রিপ ব্যবহার করুন। বিভিন্ন ধরনের পেনসিল গ্রিপার রয়েছে। আপনার শিশু যেটাতে আরামদায়ক অনুভব করে সেটি ব্যবহার করুন। এছাড়া বিভিন্ন বিশেষ ডিজাইন করা পেনসিলও পাওয়া যায় সেটাও ব্যবহার করতে পারেন। শিশুকে লেখার ক্ষেত্রে উৎসাহিত করার জন্য এই সমস্ত উপকরণ গুলো ব্যবহার করতে হবে।

৬) শিশুকে বিভিন্ন শেপস কপি করতে দিন। প্রথমে শিশুকে একটি খাতায় লাইন টানতে বলুন নিজের ইচ্ছে মত। তারপর বিভিন্ন আকারের লাইন টানতে বলুন। খুব ধীরে ধীরে এই কাজটি করুন। প্রতিদিন ৫-১০ মিনিট এভাবে কপি করতে দিন। তারপর বড় আর্ট পেপারে লাইন টানতে বলুন ও বিভিন্ন আঁকার কপি করতে দিন।

৭) যে সকল শিশু টাচ করতে ভালোবাসে তাদের ক্ষেত্রে আঙ্গুল দিয়ে লেটার লিখতে শেখাতে হবে। যেমন- শেভিং ক্রিম থালায় ঢেলে তার মধ্যে বিভিন্ন লেটার লেখানো আবার গলা আটা বা বালির ব্যবহার করেও এই কাজটি করা যেতে পারে। এতে শিশুর লেখার প্রতি আগ্রহ বাড়ে।

৮) ডট জয়েনিং অ্যালফাবেট ওয়ার্কশীট ব্যবহার করুন। ওয়ার্কশীট কিনে তাতে শিশুকে দিয়ে নিয়মিত ডট জয়েনিং অভ্যাস করান। বিভিন্ন ধরনের লাইন ট্রেসিং অ্যালফাবেট ট্রেসিং ওয়ার্কশীট পাওয়া যায়  সেগুলো ব্যবহার করুন।

৯) বড় বড় অক্ষর দিয়ে শব্দ লিখুন। বড় অক্ষরে শব্দগুলো শিশুর মনে শব্দটির গঠন সম্পর্কে সহজেই ধারনা সৃষ্টি করে। শিশুকে প্রথম যে শব্দের সাথে পরিচয় করাবেন সেই শব্দটি যেন তার পছন্দের কোন শব্দ হয়। যেমন কোন প্রিয় খাবার বা প্রিয় কোন বস্তুর নাম।

১০) শিশুকে তার আগ্রহের বিষয় লিখতে বলুন। যদি দেখা যায় চাইল্ড লিখতে পারে কিন্তু লিখছে না লেখার কোন আগ্রহ নেই এই সময় তার প্রিয় কাজটির সম্পর্কে কথা বলুন। কথার ছলে তাকে বলুন সেই বিষয়টি লিখে দেখাতে যদি সে লিখে দেখায় তাহলে আপনি তাকে একটি গিফট দিবেন। যেমন ধরা যাক শিশুকে তার প্রিয় পাখিটির নাম বলতে বলুন। সে নাম বললে এবার তাকে সেই পাখির নামটি লিখতে বলুন। তারপর সে এর মধ্যে অন্য কি পাখি দেখেছে তা জিজ্ঞেস করুন। সেই পাখির নামটিও লিখতে বলুন। এভাবে বিশেষ আগ্রহের বিষয় দিয়ে শিশুকে লেখার ক্ষেত্রে আবার আগ্রহী করে তোলা যায়।

১১) সেন্সরই সমস্যাগুলো খেয়াল রাখুন। অটিজম শিশুর অভিভাবকরা শিশুর সেন্সরই সমস্যাগুলো বেশীরভাগই খেয়াল রাখে না পড়ানোর সময়। মনে রাখতে হবে আমাদের শিশুরা বিশেষ শিশু আর অটিজম শিশুদের সেন্সরই সমস্যা বেশি। তাই তাদের জন্য একটু আলাদা ব্যবস্থা করতে হবে। ঘরের একটা শান্ত পরিবেশ বেঁছে নিন। যেখানে পর্যাপ্ত বাতাস ও আলো থাকে। যদি চারপাশে শব্দ থাকে তবে সফট মিউজিক ব্যবহার করুন আশেপাশে যেন কোন দুর্গন্ধ না থাকে বা যা শিশু সহ্য করতে পারেনা তা যেন না থাকে।

১২) মৌখিক নির্দেশ অনেক অটিস্টিক শিশু বুঝতে পারে না। এক্ষেত্রে ভিসুয়াল উপকরণ সামনে রাখতে হবে ও তা দেখিয়ে নির্দেশ দিতে হবে।

১৩) প্রতিদিনের রুটিনে লেখার কাজ রাখতে হবে। অটিস্টিক শিশুরা নিয়ম মত একটা নির্দিষ্ট রুটিন মেনে চলতে ভালোবাসে তাই তাদের প্রতিদিনের কাজে লেখার কাজ রাখা জরুরী। দেখা গিয়েছে দুপুরে খাবার আগে বা পরে অটিজম শিশুকে দিয়ে যদি লেখানোর কাজ করানো যায় তাহলে তারা আগ্রহের সাথে সেই কাজ করে। শিশুর উপর লেখার জন্য চাপ সৃষ্টি করবেন না। যদি সে লিখতে না চায় কোন মুহূর্তে সেক্ষেত্রে তার পছন্দের কাজ করান।

উল্লিখিত পদ্ধতির ব্যবহারের পরেও যদি শিশুর লেখার ক্ষেত্রে সমস্যা থেকে যায় তবে তার জন্য কোন ভালো অকুপেশনাল থেরাপিস্ট এর পরামর্শ নিন।

ধন্যবাদ

Written By Sandip Goon

Special Educator

Leave a Reply