অটিজম শিশুরা বেশিরভাগ দেখে দেখে শিখে ও তা নিয়ে ভাবে। অর্থাৎ তারা ভিসুয়াল লার্নার ও থিঙ্কার হয়। এই পদ্ধতি অটিস্টিক শিশুদের ভাবনা চিন্তা করতে তাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ও মনের ভাব প্রকাশ করতে সাহায্য করে। এই ভিসুয়াল লার্নিং ব্যবস্থা মূলত ছবি, রং, আঁকা, ছবি ও রং এর মিশ্রণ এসবের মাধ্যমে গড়ে ওঠে। এর মাধ্যমে শিশুর শব্দের সম্পর্কে ধারনা যেমন স্পষ্ট হয় ঠিক তেমনি সাধারণ স্কিল গুলো উন্নত হয়। নিম্নে রং চেনানোর কিছু পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হল-
১) অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুদের রং চেনানো খুব-ই কঠিন বিষয়। আর তার সামনে যদি অনেক ধরনের রং রেখে তাকে চেনানো হয় সেটা আরও বেশি কঠিন কাজ। তাই একবারে বিভিন্ন কালারের ধারনা দিতে যাবেন না। চেষ্টা করুন একটি সময়ে একটি কালারের বিভিন্ন টাইপের ধারনা দেওয়ার। ধরুন শিশুকে সবুজ রং চেনাতে চান। তাহলে লাইট গ্রিন, ডার্ক গ্রিন এবং রেগুলার গ্রিন এই তিন ধরনের কালার চিনতে শেখান। এর মাধ্যমে শিশু বুঝতে পারবে যে একটি কালারের বিভিন্ন ধরন রয়েছে।
২) একসঙ্গে অনেক কিছু বেছে নিতে বলবেন না। অটিস্টিক শিশুরা একসাথে অনেক কিছু বেছে নিতে পারেনা। এর ফলে তাদের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। ধরুন একটি বোর্ডে ১০টি কালার কার্ড রেখে দিলেন এবার শিশুকে নির্দেশ দিলেন যে লাল কার্ডটি বেছে নাও। একসঙ্গে অনেক কালার দেখে সে সঠিক নির্দেশিত কালারটি তখন বেছে নিতে দ্বিধায় ভুগবে। এক্ষেত্রে চেষ্টা করবেন দু থেকে তিনটি কালার রেখে তা থেকে কোনও কালার কার্ড বেছে নেওয়ার।
৩) বেশিরভাগ শিক্ষক ও অভিভাবক একটা বিষয়ে ভূল করে থাকে তা হল তারা অনেক ধীর গতিতে এই সমস্ত শিশুদের শিক্ষণ প্রক্রিয়া চালিয়ে যায়। তারা ভাবে তাদের শিশু একটি বিষয় যতক্ষণ ঠিকমত আয়ত্ত করতে না পারছে তখন অন্য বিষয়ে যাওয়া ঠিক নয়। তারা একটি কালার দেখিয়ে সেটাই দিনের পর দিন “এটা কি কালার বলো তো” এই প্রশ্ন করে যায়”। যা শিশুর কাছে একঘেয়ে হয়ে দাড়ায়। তাই যখন দেখা যায় শিক্ষক বা অভিভাবক কার্ডটি বের করছে সে বুঝে যায় এবার কি হবে তাই দৌড়ে পালায় নয়ত নির্লিপ্ত থাকে।
একটি কালার দেখিয়ে তা দিনে দুবারের বেশি জিজ্ঞেস করবেন না। প্রতি সপ্তাহে নতুন কালার চেনান। আর সাথে পুরনো কালারগুলো একবার করে পুনরাবৃত্তি করুন, যদি উত্তর না দেয় নিজে উত্তর দিয়ে তাকে উৎসাহিত করুন ও সে সঠিক উত্তর দিলে পুরস্কৃত করুন। এর মাধ্যমে বিষয়ের প্রতি শিশুর আগ্রহ বজায় থাকবে ও সে বুঝবে প্রতি সপ্তাহে নতুন কিছু আসবে।
৪) নিশ্চিত করুন যে শিশু শিক্ষার সাথে জড়িত প্রত্যেকে শিশু যে ভিজুয়াল ইঙ্গিতগুলি ব্যবহার করে তা বোঝে এবং পরিবারের প্রত্যেকে যেন একই পদ্ধতিতে তাকে শিক্ষাদান করে। একেক জনের একেক পদ্ধতি শিশুর মধ্যে দ্বিধার সৃষ্টি করে। যার ফল স্বরুপ তারা উত্তেজিত হয়ে ওঠে কিংবা frustrated হয়ে পরে। শিশুকে বিদ্যালয়ে যে উপকরণের মাধ্যমে পড়ানো হয় বাড়িতে আপনিও সেই উপকরণ ব্যবহার করুন।
৫) কোনো একটি বিশেষ কালারের প্রতি অটিজম শিশুরা অনেক সময় বিশেষ প্রতিক্রিয়া করে থাকে। পছন্দ কিংবা অপছন্দের উপর ভিত্তি করে এই প্রতিক্রিয়া হতে পারে। এক্ষেত্রে দেখা যায় শিশুটি অনেক সময় রংটি মুখে দিচ্ছে কিংবা ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছে। তাই রং চেনানো শুরুর সময় শিশুর এই পছন্দ অপছন্দ সম্পর্কে শিক্ষক ও অভিভাবক প্রত্যেকেই সচেতন থাকবেন। প্রতিটি অটিস্টিক শিশু আলাদা তাই তাদের পছন্দ অপছন্দ আলাদা। সেটা অভিভাবককে খেয়াল রাখতে হবে শিশুর কোন কালারের প্রতি বিশেষ প্রতিক্রিয়া হয়। তবে সেফ কালার হিসেবে প্রথমে সাদা কালো বেছে নিন।
৬) কালার মেচিং ও সর্টিং ওয়ার্কশীট ব্যবহার করুন। দিশার বিভিন্ন ম্যাচিং ও সর্টিং ওয়ার্কশীট গুলো ব্যবহার করতে পারেন। একটি অবজেক্ট দিয়ে একটি কালার চেনানোর জন্য কালার ওয়ার্কশীট খুবই উপযোগী।
আজ এতটুকুই, পরবর্তীতে কালার নিয়ে আরেকটি পার্ট লিখবো।
Written by Sandip Goon (Principal Disha Digital School))