Blog

অটিজম শিশুদের হাতের লেখা শেখানোর আটটি(৮) পরিকল্পনা

dishadigitalschool

লেখা শেখানোর কিছু টিপস এখানে আলোচনা করা হলো।

আমাদের বিদ্যালয় শিক্ষা ব্যবস্থার একটি প্রধান স্কিল হল লিখতে পারা। কিন্তু অটিজম আছে এরকম বিশেষ শিশুদের সমস্যা হলো তাদের লেখার ক্ষেত্রে অক্ষমতা। তাই লেখা শেখানোর ও লেখার জন্য বিভিন্ন স্কিল ডেভেলপমেন্ট করতে হলে একজন দক্ষ অকুপেশনাল থেরাপিস্টের সাহায্য নিতে হবে অভিভাবকদের।

দীর্ঘদিন বিশেষ শিশুদের সঙ্গে কাজ করছি ও প্রচুর অটিজম শিশুর শিক্ষার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ভাবে যুক্ত থাকার ফলে তাদের লেখা সংক্রান্ত বিষয়ে যা জ্ঞান অর্জন করেছি তা আপনাদের সাথে শেয়ার করছি এই পোস্টের মাধ্যমে।

১) যত দ্রুত সম্ভব লেখা সংক্রান্ত কাজ শুরু করুনঃ

আমাদের দেশে একজন বিশেস চাহিদা সম্পন্ন শিশুর শিক্ষার বিষয়ে পরিবারের লোকজন অবহেলা করে থাকে যার ফলে দেশের প্রশাসনিক কর্তারাও আমাদের বিশেষ শিশুদের শিক্ষা নিয়ে মাথা ঘামায় না।

পরিবারের অন্যান্য সাধারন শিশুর মত বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুটিরও শিক্ষা ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করতে হবে।

বই পড়া শুরুর সাথে সাথে লেখা শেখানোর প্রাথমিক কাজও দ্রুত শুরু করতে হবে। কোন বয়সে শিশু কি করছে খেয়াল রাখতে হবে।

শিশুর ১২ মাস বয়সের পর থেকেই তার মধ্যে প্রি রাইটিং স্কিল ডেভেলপের বিভিন্ন বিষয় লক্ষ্য করা যায়, যেমন সে আঙ্গুল দিয়ে হয়ত বিভিন্ন দাগ কাটার চেষ্টা করে বা দু আঙ্গুল দিয়ে কোনো অব্জেক্ট ধরার চেষ্টা করে।

২ বছর বয়সে শিশুর হাত দিয়ে কোনো কিছু আঁকড়ে ধরার শক্তি আরো বৃদ্ধি পায়। সমান্তরাল ও উল্লম্ব ভাবে বিভিন্ন হিজিবিজি আঁকতে পারে।

অটিজম শিশুদের কিভাবে রং চেনাবেন

এই সময় শিশুকে দিয়ে থালায় ক্রিম বা পাউডার ঢেলে আঙ্গুল দিয়ে বিভিন্ন শেপ আঁকানো যেতে পারে। প্লে ডো দিয়ে বিভিন্ন এক্টিভিটিও করানো যায়।

২) শিশুর সীমা জানুন।

উপরের সমস্ত এক্টিভিটিগুলো করানোর পর এবার প্রধান শর্ত হল শিশুর কাজের লিমিট জানা। কিভাবে কাজ করালে সে ভালো কাজ করবে আর করবে না তা জানতে হবে। ধরুন কোনো বিষয় পড়াচ্ছেন কিন্তু বিষয়ের সাথে শিশু একাত্ম হতে পারছে না ফলে সে সেই বিষয়ে মনোযোগ দিতে পারবে না। অর্থপূর্ণ একটা বিষয় বা পরিবেশ তার জন্য প্রয়োজন।

অটিজম আছে এরুপ শিশুরা হঠাৎ করে কোনো কাজে মনোযোগ বসাতে পারে না এখানে তাদের সীমাবদ্ধতা। তাই লেখার কাজ শুরু করার আগে লেখার একটা পরিবেশ তৈরি করে নিতে হবে। যেমন চারপাশে এমন কোনো বস্তু যেন না থাকে যা শিশুর মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটায়। লেখার আগে প্রি রাইটিং কাজ দিয়ে পরিবেশ তৈরি করে নিন। তারপর প্রি রাইটিং বিভিন্ন শেপ দিয়ে কাজ শুরু করা যেতে পারে।

Schmitt 2014- মতে শিশুদের অ্যাটেনশন স্পান প্রতি বছর ৩-৫ মিনিট করে বৃদ্ধি পায়।

ধরা যাক কোনো শিশুর বয়স ৪ বছর। একটি টাস্ক যেমন লেটার আইডেন্টিফিকেশন করতে দিলে সে ১২ থেকে ২০ মিনিট মনোযোগ দিয়ে কাজটি করবে এটাই আশা করা যায়।

উপরে যে পরিবেশ তৈরির কথা বললাম তা এই মনোযোগ বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকেই বোঝানো হয়েছে। মোবাইলে গেম খেলা ভিডিও দেখা এগুলোতে বেশি মনোযোগ থাকে শিশুদের। আবার একটি কঠিন টাস্ক তার মনোযোগ কমিয়ে দিতে পারে।

৩) সঠিক সক্ষমতার জায়গাটি খুঁজে নিতে হবে। 

বিভিন্ন রকম টাস্ক দিয়ে বা কোনো টাস্কের জটিল অংশ দিয়ে শুরু না করে বেঁছে নিতে হবে সহজ জায়গাটি।

অটিজম শিশুদের লেখা শেখানোর কিছু টিপস

লেটার ফরমেশনের কাজ করাতে চাইছেন আপনার শিশুকে। এক্ষেত্রে আগে আপনি জানুন আপনার শিশুর প্রিরাইটিং স্ট্রোকস সম্পর্কে। সে কোন ধরনের দাগ আঁকতে পারে বা আঁকতে ভালোবাসে। ধরা যাক, শিশু সমান্তরাল ও লম্বালম্বি দাগ টানতে পারে। তাহলে ইংরেজি সহজ লেটার একটি বেঁছে নিন। যেমন F।

৪)  নির্দেশের ভাষা সংক্ষিপ্ত সহজ হতে হবে।

অটিজম আছে এরকম শিশুদের দীর্ঘ বাক্যের নির্দেশাবলী বুঝতে সমস্যা হয়। তাই কোনো টাস্কের প্রধান বিষয়টা কি তা বুঝে নিয়ে কিছু শব্দে সেটা বোঝাতে হবে। কোনো প্রি রাইটিং স্ট্রোক নিয়ে কাজ করলে তার প্রতি স্টেপেই চেষ্টা করতে হবে একই শব্দ দিয়ে ভারবাল প্রম্পট দেওয়ার।

যেমন খাতায় লম্বালম্বি দাগ টানতে বলবেন শুধু দুটি শব্দে “লম্বা দাগ” শেষ হলে “থামো”

৫) শিশুর সেন্সরই সমস্যাগুলোর দিকে নজর রাখতে হবে।

লেখার কাজ শুরুর আগে কিছু সেন্সরই কাজ খুব প্রয়োজন। এর ফলে শিশুর শরীরের হাতের সঞ্চালন ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।

যে সকল শিশু সবকিছু টাচ করে দেখতে চায় তাদের জন্য স্যান্ড পেপার ব্যবহার করা যেতে পারে সাথে কোনো পাত্রের মধ্যে ক্রিম ঢেলে সেই ক্রিম মাখানো পাত্রের উপর আঙ্গুল দিয়ে বিভিন্ন শেপ আঁকাতে হবে।

কিছু শিশু যারা চেয়ার টেবিলে বসে কাজ করতে চায় না। তাদের ক্ষেত্রে অয়ালে ওয়ার্কশীট আঠা দিয়ে লাগিয়ে তার উপর পেন্সিল বা পেন দিয়ে লেখাতে পারেন। তারা শরীরের মুভমেন্ট পছন্দ করে।

কিছু শিশুর ওরাল মোটর ইনপুটের প্রয়োজন হয়। মানে তারা মুখে সবসময় কিছু দিতে ভালোবাসে, যেমন জামার কলার চিবোয়, পেন পেন্সিল মুখে দিয়ে চিবোতে ভালোবাসে। এক্ষেত্রে তাদের কাজ শুরু করার আগে শক্ত কোনো খাবার দেওয়া যেতে পারে যা চিবিয়ে খাবে যেমন- গাঁজর, শসা প্রভৃতি এছাড়াও চিবানোর কিছু সেন্সরই টয়েস আছে।

কাজ করার সময় অনেক শিশুর অডিটরি সাপোর্টের প্রয়োজন হয় আবার কারো শান্ত পরিবেশের প্রয়োজন হয়। আপনার শিশু কোন পরিবেশে ভালো কাজ করে তা পর্যবেক্ষণ করে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা করতে হবে। অনেক শিশু হালকা ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকে ভালো কাজ করে।

কিভাবে প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট বানাবেন?

শারীরিক সঞ্চালনের জন্য  Pushing- Pulling, jumping, wrapping, wall pull ups প্রভৃতি কাজ করার পরামর্শ থেরাপিস্টরা দিয়ে থাকেন। এই বিষয়গুলো বিস্তারিত জানার জন্য একজন অকুপেশনাল থেরাপিস্ট এর সাথে অবশ্যই যোগাযোগ করবেন। আপনারা আমাদের অকুপেশনাল থেরাপিস্ট রাখি সিং ম্যামের সাথেও যোগাযোগ করতে পারেন। আমাদের ওয়েবসাইটে উনার অনলাইন এপয়েন্টমেন্ট নিতে পারবেন। আমাদের অয়েবসাইট- www.dishadigitalschool.in

৬) ভিজুয়াল নির্দেশ ব্যবহার করতে হবে।

আমাদের দিশা ডিজিট্যাল স্কুলের বর্তমান ১০০ জন অটিজম শিক্ষার্থীর মধ্যে একটা ট্রেন্ড লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে তারা বেশিরভাগই ভিজুয়াল মানে ছবি দেখে যে কোনো কাজ সহজে বুঝতে ও করতে পারছে। তাই শিশুকে যখন নির্দেশ দান করবেন তা যেন ছবি দেখিয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়।

যেমন শুধু লাইন টানা ট্রেসিং ওয়ার্কশীট এর থেকে ছবি দিয়ে শুরু ও শেষ এমন ট্রেসিং লাইনগুলো তারা ভালো ট্রেস করতে পারবে।

অনেক শিশু টেবিলে রাখা ওয়ার্কশীটের দিকে তাকাতে চায় না। এর জন্য প্রথমে শিশুর চোখের সামনে এমন কোনো ছবি ধরুন যা ওর চোখে উদ্দীপনার সৃষ্টি করবে। তারপর সেই ছবি ধিরে ধিরে টেবিলে নামিয়ে আনুন।

এবার শিশুকে হাত ধরে সরাসরি না লিখিয়ে অভিভাবক হিসেবে আপনি কাজটি শিশুর সামনে করে দেখালে সে দ্রুত তা বুঝতে পারবে।

৭) একটা নির্দিষ্ট রুটিন ফলো করতে হবে। 

একটা রুটিন তৈরি করে প্রতিদিনের কাজগুলো রোজ নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী করিয়ে যেতে হবে। প্রি রাইটিং ও হ্যান্ড রাইটিং স্কিলের কাজগুলো প্রতিদিনের রুটিনে রাখতে হবে। এর জন্য ভিজুয়াল সিডুলে রাইটিং স্কিলের ছবি রাখুন। রুটিন ও সিডুল শিশুর মধ্যে মানসিক চাপ ও উত্তেজনা কমাতে সাহায্য করে।

৮) পুরষ্কার (রিওয়ার্ড)

শিশু আই কন্টাক্ট করলো বা নির্দেশ ফলো করলো তাহলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে পুরস্কৃত করুন এর ফলে সে ভালো কাজগুলো করতে উৎসাহিত হবে। এই রিওয়ার্ড সিস্টেমের জন্য FIRST- THEN বোর্ড বা রিওয়ার্ড চার্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।

রিওয়ার্ড চয়েস কার্ড একটি ফাইলের মধ্যে বা একটি পেজের মধ্যে ছবিগুলো আঠা দিয়ে লাগিয়ে রাখুন। এবার তাকে চয়েস করতে বলুন শিশুর কোনটি পছন্দ। সে যে রিওয়ার্ডটি পছন্দ করবে তা আপনি শিশুকে কাজ করার পর দিবেন।

“তুমি এই লাইনগুলো ট্রেস করলে তারপর তোমায় এই চকোলেট টা দেবো” এভাবে রিওয়ার্ড ব্যবহার করে শিশুকে কাজের মধ্যে ব্যস্ত রাখা সম্ভব।

পরিশেষ বলি যে আপনার শিশুর অটিজম থাকুক আর না থাকুক প্রি রাইটিং স্ট্রোকসের কাজগুলো যত দ্রুত শুরু করা উচিৎ।

Written By

Sandip Goon

Principal

Disha Digital School

Leave a Reply