প্রথমেই বলি অটিজম আছে এসব শিশুর অ্যাগ্রেসিভ আচরণ তাদের প্রয়োজন বোঝানোর বা তারা যা ফিল করছে তা ব্যক্ত করার একটি মাধ্যম। বেশীরভাগ অভিভাবকের পক্ষেই কঠিন হয়ে পরে এই ধরনের আচরণ সামলানো। এই সমস্যার সম্মুখীন হয়ে অনেকেই জিজ্ঞেস করে এরকম আচরণ করলে অভিভাবক হিসেবে আমি কি করবো?
এক্ষেত্রে অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ও বিভিন্ন রিসার্চে উল্লিখিত পদ্ধতির কথা আমি নিম্নে তুলে ধরছি।
অটিজম শিশুর অ্যাগ্রেসিভ ও অন্যান্য সমস্যা মূলক আচরণের ক্ষেত্রে ৪টি পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। এই ৪টি পদ্ধতি হল-
১)আইডেন্টিফিকেশন- চিহ্নিতকরণ ২) আন্ডারস্ট্যান্ডিং- বোঝা ৩) ম্যানেজমেন্ট- পরিকল্পনা ৪) প্রিভেনশন –নিবারণ।
১) আইডেন্টিফিকেশন বা চিহ্নিতকরণ- প্রথমেই শিশুর সমস্যামূলক আচরণকে চিহ্নিত করতে হবে। অভিভাবক হিসেবে আপনাকে একটি খাতার মধ্যে শিশুর এই সমস্যামূলক আচরণ এর ধরন লিখে রাখতে হবে। অর্থাৎ সে কি ধরনের আচরণ করছে- হঠাৎ করে রেগে গিয়ে জিনিস ছুঁড়ছে, নিজের হাতে কামোড় দিচ্ছে, অন্যকে মারছে, কান্নাকাটি করছে প্রভৃতি যে আচরণ করছে সেটা লিখিত ভাবে চিহ্নিত করতে হবে। এবার সেটা কখন করছে, সেই সময় তার চারপাশের পরিবেশ কেমন ছিল এগুলো চিহ্নিত করতে হবে।
২) আন্ডারস্ট্যান্ডিং বা বোঝাঃ- পরবর্তী স্টেপ হল সমস্যা বোঝা। বিশেষজ্ঞরা অটিজম শিশুর এসব সমস্যামূলক আচরণ বোঝার জন্য FBA(Functional Behavioral Assessment) এর প্রয়োগ করে থাকেন। অর্থাৎ অটিজমের আচরণের কার্যকলাপ কি কি তা বোঝা। যেমন ধরা যাক আপনি যে কাজটি চাইল্ড কে দিয়ে করাচ্ছেন তা তার পচ্ছন্দ না, কিংবা স্কুল শিক্ষক যা পড়াচ্ছে তা সে বুঝতে পারছে না।, কিংবা সে যা চাইছে তা পাচ্ছে না। অন্যকে বোঝাতে না পেরে অনেক সময় তারা অ্যাগ্রেসিভ আচরণ করে থাকে। সুতরাং চিহ্নিতকরণের পর এই কমিউনিকেশন মাধ্যমটি বুঝতে হবে।
এছাড়া অ্যাগ্রেসিভ আচরণের অন্যান্য লক্ষণগুলো খাতায় লিখে তা আন্ডারলাইন করে বোঝা যেতে পারে। যেমন- শিশুর ডেইলি রুটিন পরিবর্তন হওয়া, পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম না হওয়া, কোন সেন্সরই সমস্যা থাকা-(শব্দ, গন্ধ, আলো) কিংবা কোন মানসিক সমস্যা থাকা। এ সমস্ত বিষয়গুলো খাতায় লিখে রাখুন। কোন সমস্যা মূলক আচরণ দেখা দিলে উক্ত বিষয়গুলোর সাথে মিলিয়ে নিন।
৩) ম্যানেজমেন্ট- এবার অ্যাগ্রেসন ম্যানেজমেন্টের বিষয়। এক্ষেত্রে অনেক অপশন রয়েছে। প্রথমে উক্ত দু পদ্ধতি অনুসরণের পর যে তথ্য সংগৃহীত হবে তা বিশ্লেষণ করে একটি পরিকল্পনা প্রয়োজন।
অনেকগুলি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে অটিজম শিশুদের নতুন ও কার্যকরী আচরণ শেখানোর ক্ষেত্রে ABA(Applied Behavior Analysis) পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গবেষণায় এও দেখা গিয়েছে যে ABA মাধ্যমে অটিজম শিশুর অ্যাগ্রেসন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে।
ABA মেথড যদি কাজ না করে সেক্ষেত্রে মেডিক্যাল কন্ডিশন গুলোর দিকে নজর দিতে হবে। আমরা জানি অটিজম শিশুদের বেশীরভাগই ঘুমের সমস্যা ও পেটের সমস্যায় ভোগে। এই সমস্যা গুলো শিশুর মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি করে ফলস্বরূপ আচরণের পরিবর্তন হয়। এছাড়া হঠাৎ অসুস্থ হওয়া, ব্যাথা কিংবা ভেতর থেকে কোন কারণে উত্তেজিত হওয়া যা বোঝাতে না পেরে অসঙ্গতি মূলক আচরণ করে থাকে।
অটিজম স্পিকের মতে অটিজম শিশু ও যুবক উভয়ের ক্ষেত্রে কিছু ওষুধের প্রয়োগ অ্যাগ্রেসন ও নিজেকে আঘাত করার প্রবণতা কমিয়ে আনতে সাহায্য করে। Risperidon(Risperdal)ও Aripiprazole(Abilify) যা U.S FOOD AND DRUG ADMINISTRATION দ্বারা মান্যতাপ্রাপ্ত, এগুলি অটিজমের সমস্যা মূলক আচরণ- যেমন অ্যাগ্রেসিভ আচরণ, টেনট্রাম ও নিজেকে আঘাত করা প্রভৃতি ক্ষেত্রে ডাক্তাররা সাজেস্ট করে থাকেন। তবে এসব প্রয়োগের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।
৪) প্রিভেনশন- শেষ পদ্ধতি হিসেবে অ্যাগ্রেসিভ আচরণকে নিয়ন্ত্রণের জন্য টিচার থেরাপিস্ট দের সাথে পরামর্শ করে strategy গ্রহণ করতে হবে। কাম ডাউন কিট, রিওয়ার্ড ব্যবস্থাপনা এছাড়া ভিসুয়ায়াল টাইম-টেবিল, ভিসুয়াল সিডুল প্রভৃতি পরিকল্পনা যথাযথ ভাবে কার্যকর করে সমস্যা মূলক আচরণকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। ভালো আচরণ করলে পুরষ্কার প্রদান এবং কমিউনিকেশন টুলের ব্যবহার করে অনেক পরিবার উপকৃত হয়েছে।
আপনি অটিজম এর আচরণগুলো কখনই পুরোপুরি সারিয়ে তুলতে পারবেন না কিন্তু অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন বিভিন্ন পরিকল্পনার দ্বারা।
আশাকরি উক্ত টিপসগুলো অভিভাবকদের কাজে আসবে।
ধন্যবাদ
Written by Sandip Goon
Special Educator