আপনার শিশুকে সমস্যার সমাধান করতে শেখান ও তার আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলুন।
আমরা বেশিরভাগ অভিভাবকই সন্তানদের নিয়ে ভবিষ্যৎ চিন্তায় চিন্তিত থাকি।
তারা কি বড় হয়ে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে পারবে? এই নিয়ে আমরা প্রত্যেকেই প্রায় চিন্তিত।
কিন্তু গবেষণা বলছে যে অভিভাবকদের উচিত এই নিয়ে নিজেরা চিন্তা না করে শিশুদেরকে ছোট থেকেই বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে শেখানো। এর ফলে তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠবে।
যাতে তারা নিজেরাই সমাধান বের করে এগিয়ে যেতে পারে তার জন্য অনুপ্রাণিত করা। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে এই সমস্যা সমাধানের কাজের সিডুল আগে থেকেই ভেবে রাখতে হবে।
এর ফলে প্রতিটি জন্মদিনে তাদের সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা প্রসারিত হবে। নিচে কিছু সমস্যা সমাধানের পরিকল্পনা আলোচনা করা হল
-
শৈশবে আপনি সবসময় কোনো খেলনা শিশুর হাতে তুলে না দিয়ে শিশু যাতে সেটি নিজে থেকে হাতে তুলে নিতে পারে সেই ব্যবস্থা করুন। দুটো খেলনা রাখুন তার যে খেলনাটি পছন্দ সেটি বেঁছে নিবে।
-
কোনো কিছু দেওয়ার আগে শিশুর মধ্যে কৌতূহল তৈরি করুন। যেমন আপনি হাত উঁচু করে একটি পুতুল ধরে আছেন। এবার শিশু সেই পুতুলটি নেওয়ার জন্য মাথা উঁচু করবে এবং পুতুলটির দিকে ও আপনার দিকে তাকাবে।
-
শিশু নিজে হাতে খেতে পারবে না বা পোশাক জিনিসপত্র নোংরা করে ফেলবে এই ভেবে আমরা তাদের খাইয়ে দিই। শিশুকে নিজে হাতে খেতে দিন এতে তার মধ্যে আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠবে।
-
শিশু কোনো কিছু টাচ করতে নিলেই আমরা “না”, থামো এসব বলে তাকে থামিয়ে দিই। এই বিষয়টি যদি না বিপদ জনক হয় তাহলে উক্ত শব্দগুলি সবসময় ব্যবহার করবেন না।
-
তাদের নিজেদের খেলনা খুঁজতে এবং দূরে সরিয়ে রাখতে উৎসাহিত করুন।
-
কোনো বস্তু খুলতে ও বন্ধ করতে উৎসাহিত করুন।
-
তাদের নিজেদের টুথব্রাশ ও টুথপেস্ট খুঁজে বের করতে বলুন।
-
বাইরে কোথাও বের হওয়ার আগে শিশুদের নিজেদের পোশাকগুলো নিজেদের বের করতে বলুন।
-
শিশুদের রেফ্রিজারেটর, শেলফে, ক্যাবিনেট বা প্যান্ট্রিতে মুদি জিনিসপত্র রাখতে দিন। এরফলে তারা জানবে কোনটি কোথায় পাওয়া যাবে, কিভাবে তা সংরক্ষণ করা হয় তাও বুঝতে পারবে।
-
খাবার পরিবেশনের আগে টেবিল সেট করতে বলুন, খাবার খাওয়ার পর তার প্লেটটি তাকে পরিষ্কার করতে বলুন ও খাবারের আবর্জনা ডাস্টবিনে ফেলতে বলুন।
-
তাদের বিছানার চাদর তুলে নতুন চাদর বিছিয়ে বিছানা তৈরি করতে শেখান। বালিশের কাভার লাগাতে বলুন।
-
বিকেলে হাঁটতে বের হলে শিশুকে জিজ্ঞেস করুন সে ডান না বাম কোন পথ দিয়ে হেঁটে যেতে চায়। রাস্তা দিয়ে হ্যাঁটার সময় ট্রাফিকের সমস্ত লাইটগুলো ও বিষয়গুলো সম্পর্কে শিশুকে বলুন।
-
মুদি দোকানে কিছু কিনতে যাওয়ার আগে শিশুকে নিয়ে লিস্ট তৈরি করুন সেই লিস্টে তার কিছু প্রয়োজন কিনা জেনে নিয়ে সেটাও যোগ করুন। এরপর সেই জিনসগুলো কিনতে কত টাকা প্রয়োজন হতে পারে তা শিশুর সামনেই হিসেব করুন বা শিশুকে দিয়ে হিসেব করান।
-
শিশুকে ব্যাঙ্কে নিয়ে যান এবং তাকে দেখান কিভাবে টাকা জমা করতে হয় ও তুলতে হয়। উপার্জিত টাকা সঞ্চয়ের কারণও তাদের বলুন।
-
বাড়িতে কোনো অনুষ্ঠান হলে সেই অনুষ্ঠানে সে কাদের নিমন্ত্রণ করতে চায় তা জানুন। অনুষ্ঠানের বিভিন্ন কাজে শিশুকে যুক্ত করুন।
-
কাছাকাছি কোনো পুলিশ স্টেশন ও ফায়ার স্টেশনে শিশুকে নিয়ে যান তাদের সাথে পরিচয় করান ও বলুন বিপদে পড়লে তারা কে কিভাবে আমাদের রক্ষা করে।
-
মাঝে মাঝে নিজেরাই কিছু সমস্যা তৈরি করুন ও শিশুকে সাথে নিয়ে সেই সমস্যার সমাধান করুন। যেমন ঘরের চাবি হারিয়ে ফেলুন এবার শিশুকে তা খুঁজে বের করতে বলুন।
অবশ্যই পড়ুন-
- এডিএইচডি শিশুদের আচরণগত সমস্যা সমাধানের কিছু পরিকল্পনা
- অটিজম শিশুদের হাতের লেখা শেখানোর আটটি পরিকল্পনা
- অটিজম শিশুদের কিভাবে রং চেনাবেন
এবার ভাবতে শেখান যদি সে একা থাকে তখন সে কিভাবে সবকিছুর সমাধান করবেঃ
-
হঠাৎ বাথরুমের লাইট নিভে গেলে তারা কি করবে?
-
তারা কি নিজে থেকে ঘরের দরজা বন্ধ করতে পারবে?
-
তারা কি জানে ঘরের বিভিন্ন নোংরা আবর্জনা কোথায় ফেলবে?
-
ফোনের বিল, লাইটের বিল ও অন্যান্য পেমেন্ট কিভাবে করতে হয় তারা কি সেটা জানে?
-
ঘরের লাইট খারাপ হয়ে গেলে জল না থাকলে কোনো কাঠমিস্ত্রির প্রয়োজন হলে তাদের সাথে কিভাবে যোগাযোগ করতে হবে তা কি আপনার সন্তান জানে?
-
হঠাৎ আঘাত পেলে নিজের শুশ্রূষা সে নিজে করতে পারবে? যেমন কোনো ক্রিম লাগানো, ব্যান্ডেজ করা।
-
তারা কি ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে পারেব? ডাক্তারের এপয়েন্টমেন্ট নেওয়া ও তাদের কে নিজের সমস্যার কথা জানানোর প্রক্রিয়াটি এখন থেকেই অভ্যাস করতে হবে।
-
হার্ডওয়্যার এর দোকান তারা চেনে? যদি না চেনে চিনিয়ে রাখুন ঘরের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় টুলসগুলো তারা কিনে আনতে পারবে।
-
নিজের খাবার নিজে তৈরি করতে শেখা একটি গুরুত্বপূর্ণ স্কিল যা এখন থেকেই অভ্যাস করানো উচিত।
এই বিষয়ে ইংরেজিতে আরও ভালো ব্লগ পোস্ট রয়েছে পড়ে দেখতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।
চলমান জীবনে অনেক ছোটখাটো সমস্যা দেখা দেয় যা আমরা সমাধান করি। কিন্তু অটিজম আছে এমন ব্যক্তিদের জন্য এটি সম্ভবত একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে। আর যদি শৈশব ও কিশোর বয়সে সমস্যা সমাধানের সুযোগ না পায় তাহলে তাদের জীবন আরও কঠিন হয়ে উঠবে।
তাই অভিভাবকদের বলব আপনার শিশুর মধ্যে আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলতে উক্ত কাজগুলি দ্রুত শুরু করুন।
Written By
Sandip Goon
Principal
Disha Digital School
[/vc_column_text][/vc_column][/vc_row]