Blog

শিশুর একা একা কথা বলা কিসের লক্ষণ? সেলফ টকিং

dishadigitalschool

অটিস্টিক শিশুর একা একা কথা বলা

সেলফ টকিং– অর্থাৎ নিজের সাথে নিজে কথা বলা। আমরা সবাই কম বেশি নিজের সাথে নিজে কথা বলে থাকি। তাই এটা খুব একটা অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়।
চুপ করে বসে থেকে কখনো বির বির করে কথা বলি আবার কখনো রেগে গেলে একা একাই সারা পাড়া কাঁপিয়ে দি।
বিষয় হল যদি মনে মনে চুপ করে ভাবি বা কথা বলি সেটা সামাজিক দৃষ্টি ভঙ্গিতে গ্রহণযোগ্য, কিন্তু যদি জোরে জোরে নিজের সাথে কথা বলি যা সময় অনুযায়ী প্রাসঙ্গিক নয় তখন তা সাধারণ দৃষ্টিতে অসুস্থ মানসিকতার লক্ষণ হয়ে দাড়ায়।
অটিস্টিক শিশুদের একটি প্রধান লক্ষণ হল এই সেলফ টকিং যা তাদের স্টিমিং এর একটি অংশ।
কেন তারা এভাবে জোরে জোরে কথা বলে?
একটু ভেবে দেখুন তো আমরা কি নিজের সাথে কথা বলিনা? আমরাও বলি আমরা যখন কোন কিছু পরিকল্পনা করি কিংবা কোন ঘটনা নিয়ে মানসিক চাপে থাকি তখন আমরা সাধারন মানুষরাও নিজের সাথে নিজে কথা বলি।
সামাজিক আচার আচরণগুলো আমরা বুঝি দেখেই মনের ভাবনাগুলো চেচিয়ে প্রকাশ করিনা।
কিন্তু যারা সামাজিক আচার আচরণ বুঝে না তাদের পক্ষে কোনটা মনের কথা (inside voice) আর কোনটা বাইরের কথা( outside voice) তা প্রকাশ করা একটি অন্যতম কঠিন কাজ। সেলফ টকিং
তাই কিছু অটিস্টিক শিশু যখন খুব উত্তেজিত হয়ে পড়ে বা কোনো কারণে মানসিক চাপে থাকে সে তার ভেতরের কথাগুলো (ইনসাইড ভয়েস) উচ্চস্বরে কিংবা বিরবির করে একা একা বলতে থাকে।
তারা জানে না তাদের অন্তর্মুখী ভাবনাগুলো কিভাবে প্রকাশ করতে হয়। বেশিরভাগ অটিস্টিক শিশু জানে না কোনটা ঠিক আর কোনটা ঠিক না।
জোরে জোরে একা একা কথা বলা যে সামাজিক দিক থেকে গ্রহণীয় নয় সেটাও তাদের শেখানো প্রয়োজন।
সারাদিন আমাদের মাথায় প্রচুর তথ্য সংগৃহীত হয়, একটি অটিস্টিক শিশু সেটা জানে না যে কোন তথ্য বাইরে প্রকাশ করা যায় আর কোন তথ্য মনে মনে ভাবতে হয়।

কিভাবে শিশুকে ইনসাইড ভয়েস ও আউট সাইড ভয়েস বোঝাবেনঃ

অন্তর্মুখী ও বহির্মুখী কথা বা ভাবনা গুলো একটি অটিস্টিক শিশুকে বোঝানোর জন্য নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলি অবলম্বন করা যেতে পারে।
১) শিশুকে বোঝান একজন মানুষের ইনসাইড ভয়েস বা অন্তর্মুখী কথা কি।
২) ইনসাইড ভয়েস এর উদাহরণ দিন এবং তা বিস্তারিত ভাবে বর্ণনা করে বলুন যে ইনসাইড ভয়েস হল চিন্তা বা আমাদের মনের ভাবনার একটি ধারনা।
কখন আমরা এই ভাবে কথা বলি আর যখন বলি তখন কি আমাদের মুখ থেকে কোন আওয়াজ বের হয়- সেটা ভালো মত বোঝান।                                  Join Our PECS Course
৩) সামনে যদি পরিবারের কেউ বসে থাকে তাকে দেখিয়েই উদাহরণ দিন। ধরুন শিশুর সামনে তার বাবা সোফায় হেলান দিয়ে বসে নিজের মনে কিছু ভাবছে।
মা হিসেবে আপনি শিশুকে বোঝাচ্ছেন- “বাবার দিকে তাকাও, তিনি কি নিজের সাথে কথা বলছেন?”(শিশু উত্তর দিল-না)।
আপনি আবার বলুন “বাবার দিকে ভালো মত লক্ষ্য কর তিনি নিজের সাথে কথা বলছেন কিন্তু কোন শব্দ শোনা যাচ্ছে না কারণ তিনি ইনসাইড ভয়েস ব্যবহার করছেন মানে মনে মনে কথা বলছেন।
বাবার ঠোঁটের দিকে তাকাও দেখো ঠোঁট বন্ধ হয়ে আছে নয়ত অল্প ফাঁকা রয়েছে। বাবার মুখ থেকে তাই কোন শব্দ শোনা যাচ্ছে না।
তাহলে তিনি কিভাবে কথা বলছেন___________(অপেক্ষা করুন শিশুর উত্তরের জন্য) কয়েক সেকেন্ড,
যদি সে কোন উত্তর না দেয় তবে আবার জিজ্ঞেস করুন-এবার শিশু উত্তর দিল “বাবা চিৎকার করছে না।” খুব ভালো বলে উৎসাহিত করুন।

৪) বাড়িতে যদি কোনো ভাই বোন থাকে তাকে সেলফ টকিং এর অভিনয় করতে বলুন। শিখিয়ে দিন সে যেন জোরে জোরে নিজের সাথে নিজে কথা বলে।

এবার অটিস্টিক শিশুটিকে বলুন- নিজের বোনের দিকে তাকাও। সে কি করছে?( শিশুটি উত্তর দিল সে নিজে নিজে কথা বলছে বা এই জাতীয় কিছু একটা উত্তর সে দিবে।)
উত্তর দিলে আপনি বোঝান হ্যাঁ সে নিজের সাথে নিজে কথা বলছে এবং কথা বলার সময় বাইরের ভয়েস ব্যবহার করছে। সে নিজের সাথে খুব জোরে জোরে কথা বলছে।
এটা কি শুনতে আর দেখতে খুব ভালো লাগছে না খারাপ লাগছে? আর সে কিভাবে কথা বললে ভালো লাগবে। ( শিশুর উত্তর হবে ইনসাইড ভয়েস ব্যবহার করলে বা মনে মনে কথা বললে)।
উপরের পদ্ধতিগুলির মাধ্যমে শিশুটি তাহলে অন্তর্মুখী কথা বা ইনসাইড ভয়েস সম্পর্কে ধারনা লাভ করছে।
এবার শিশুকে নিজের ভাবনা সম্পর্কে ধারনা দান করতে হবে।
অর্থাৎ সে কি ভাবছে বা অন্য কেউ মনে মনে কি কথা বলছে সে সম্পর্কে ধারনা সৃষ্টি করতে হবে। এক্ষেত্রে নিম্ন পদ্ধতিগুলি ব্যবহার করা যেতে পারে।
১) উপরের বাবার উদাহরণটি দিয়ে আবার বোঝানো যাক।
বাবাকে দেখিয়ে মা হিসেবে আপনি শিশুকে বলুন- বাবার দিকে তাকাও, দেখো বাবা ইনসাইড ভয়েস ব্যবহার করে নিজের মনে কথা বলছেন।
এটাকে আমরা সাধারণত চিন্তা বা ভাবনা বলি। বাবার কাছে যাও আর বাবা কে জিজ্ঞেস করো বাবা তুমি কি ভাবছো?
( এবার শিশুটি তার বাবার কাছে গিয়ে তা জিজ্ঞেস করবে এবং তার বাবা তাকে হাসির সাথে তার প্রশ্নের উত্তর দিবে। এক্ষেত্রে তিনি তার শিশুর একা একা কথা বলার প্রসঙ্গ নিয়ে উত্তর দিতে পারেন।)
তারপর শিশুকে বাবার পাশে বসিয়ে মাকে অনুকরণ করতে বলতে হবে। বাবা এক্ষেত্রে শিশুকে বলবে –মার দিকে তাকাও মা কি ভাবছে দেখো।
তুমিও সেভাবে কিছু ভাবো তো। কয়েক সেকেন্ড অপেক্ষা করুন শিশুকে সেভাবে ভাবার জন্য সময় দিন। যদি সে মার মত দেখে কিছু অনুকরণ করে ভাবার চেষ্টা করে তাহলে জিজ্ঞেস করুন কি ভাবলে তুমি বা তুমি কিছু ভাবছও? উত্তর হ্যাঁ বা না সে দিবে।
তারপর কোনো কিছু যদি সে বলে সেটা নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যান।

ভাবনা বা চিন্তা করার অভ্যাস শেখানোঃ

১) যখন শিশুটি একা একা কথা বলছে তাকে লক্ষ্য করুন তার পাশে যান জিজ্ঞেস করুন- ‘তুমি কি বিষয়ে ভাবছো?
শিশুটি উত্তর দিলে প্রশংসা করে বলুন – বা খুব সুন্দর বেশ ভালো কিন্তু তুমি খুব জোরে জোরে কথা বলে ভাবছো যা শুনতে ভালো লাগছে না।
তুমি তোমার ইনসাইড ভয়েস ব্যবহার কর।– এর মাধ্যমে শিশুকে ভেতরের ও বাইরের কথা বুঝিয়ে মনের ভাবনা গুলো মনে মনে ভাবতে শেখাতে হবে।
২) যখন শিশুটি চুপ করে বসে থাকবে- তাকে বলুন “বা, আমি আজ খুব খুশি তুমি আজ তোমার ইনসাইড ভয়েস ব্যবহার করেছো,(একটু থামুন) এবার জিজ্ঞেস করুন কি ভাবছিলে তুমি?
শিশুটি যে উত্তর দিবে তা নিয়ে কথোপকথন চালিয়ে যান। এভাবে ভেতরের ভাবনাগুলো ভাবার ধারনা সৃষ্টি হবে শিশুর মধ্যে।
৩) যদি শিশু কোন কাজে ব্যস্ত থাকে তাহলে তার পাশে গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করুন- কি কাজ করছো তুমি?
যদি সে চুপচাপ কাজটি করতে থাকে তাহলে তাকে উৎসাহিত করুন তার ইনসাইড ভয়েস ব্যবহারের জন্য।
আর যদি সে নিজে নিজে কথা বলতে থাকে তাহলে মনে করিয়ে দিন ইনসাইড ভয়েস ব্যবহার করে কাজটি করতে।
যখনই শিশু একা একা কথা বলার চেষ্টা করবে উচ্চস্বরে, তাকে মনে করিয়ে দিন ইনসাইড ভয়েস এর কথা।
এবার সে কথা বলা থামিয়ে চুপ করে কাজ করলে বলুন- খুব ভালো চিন্তা তুমি এবার তোমার কাজ কর। আমি তোমার ইনসাইড ভয়েস পছন্দ করছি।
৪) আসে পাশে মানুষের সামনে যদি শিশু অর্থহীন সেলফ টকিং করে সেখানে তাকে বলুন- তুমি চুপ করে মনে মনে ভাব। তুমি তোমার ইনসাইড ভয়েস ব্যবহার কর।
৫) কোন অনুষ্ঠান বা কাজের সময় শিশুকে বিশ্রামের সুযোগ করে দিন এবং তাকে ভাবতে বলুন ইনসাইড ভয়েস ব্যবহারের মাধ্যমে, এতে শিশুটি অনুষ্ঠান এর কোলাহল বা কাজের চাপ থেকে নিজেকে হালকা করার সুযোগ পাবে।
উপরের পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করে দেখুন আশাকরি সুফল পাবেন।
কিছু জিজ্ঞাসা থাকলে ব্লগে কমেন্ট করবেন। ব্লগটি পড়ে উপকৃত হলেও জানাবেন।
Sandip Goon
Principal
Disha Digital School

Leave a Reply